• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২১ অপরাহ্ন

লালদীঘি পাড়ের আহসান বোডিং পতিতা-মাদকের অভয়াশ্রম

Md Nazim Uddin / ২৭ ভিউ টাইম
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১
আহসান বোডিং এর ম্যানেজার নাজিম ও নারী সাপ্লাই দেওয়ার ছবি

মাদক ও পতিতা যুব সমাজ ধ্বংসের একমাত্র হাতিয়ার

নারী সাপ্লাই দেওয়ার ছবি

মরন নেশা ইয়াবা, মদ-গাজা, নারী ও জুয়া খেলার আসর এ সবই যুব সমাজ ধ্বংসের হাতিয়ার। সেই হাতিয়ার যেন পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বিদ্যুৎ গতিতে বেড়েই চলেছে, তারই মাঝে যুব সমাজ ধ্বংসের অন্যতম হাতিয়ার পতিতা ও মাদক। সেই মাদক ও নারী পাচারের সম্রাট আহসান বোডিং এর ম্যানেজার নাজিম।

কক্সবাজারে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত নজর কেড়েছে সবার। কক্সবাজার একটি পর্যটন নগরী ও পর্যটন রাজধানী হিসেবে সুনাম রয়েছে। এখানে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত নগরী হিসেবে পেয়েছে স্বীকৃতি। কিন্তু এই শহরের সেই সুনাম আদৌ অব্যাহত রাখতে পারবে কিনা এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের।

পতিতার সম্রাট ও মাদক কারবারি ম্যানেজার নাজিম

“পুলিশ সাংবাদিক…..টাইম নাই। তারা আমার পকেটে থাকে। সবাইকে মাসিক টাকা দিয়ে ব্যবসা করছি। তোর হেডাম থাকলে কিছু কর”। কক্সবাজার শহরের লালদীঘি পশ্চিম দক্ষিণ পার্শ্বে অবস্থিত আহসান বোর্ডিং এ পতিতা ব্যবসা নিয়ে সংবাদ সংগ্রহে গেলে সাংবাদিকদের দম্ভ করে এসব কথা বলেছেন হোটেলের ম্যানেজার নাজিম উদ্দীন।

পর্যটন শহর হওয়ার সুবাদে কক্সবাজারের অর্ধশতাধিক আবাসিক হোটেলে প্রকাশ্যে চলছে মাদক ও পতিতাবৃত্তিসহ নানা অপরাধ। রাজনৈতিক দলের নব্য নেতা থেকে শুরু করে শহরের টপ টেররদের চাঁদাবাজি ও কিছু অসাধু প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মাদক, ছিনতাই, অপহরণ, ব্ল্যাকমেইল এবং নারী ব্যবসাসহ নিয়ন্ত্রিত হয় এসব হোটেল থেকেই। এখানে বসানো হয় নারী দেহের পসরা। শুধু আবাসিক হোটেলে নয়, চালানো হয় বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ী ও আবাসিক মেসকেন্দ্রিকেও।

অভিযোগ রয়েছে- এসব কাজে খোদ মালিকপক্ষই জড়িত আর সহযোগিতা দিচ্ছে কিছু নব্য সরকার দলীয় নেতা ও এক শ্রেণীর অসাধু প্রশাসনের কর্মকর্তা। নিম্নশ্রেণীর আবাসিক হোটেল বলে স্বাভাবিক ব্যবসা এসব হোটেলে মন্দা, তাই পতিতাবৃত্তি ও বর্ডারের চাহিদা অনুযায়ী করে হোটেলগুলো চালানো হয় বলে অনেক হোটেল মালিক জানিয়েছে। প্রশাসনের চোখের সামনেই চলছে অবৈধ দেহ ব্যবসা। তবুও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়না কেন সচেতন নাগরিকদের প্রশ্ন?

রাস্তার উপর দাড়িয়ে থাকা দালাল

বহুল আলোচিত পতিতার স্বর্গরাজ্য কক্সবাজার শহরের লালদিঘি পাড়ের আহসান বোডিং। আহসান বোডিং এর নাম শুনলে মানুষ মনে করে কক্সবাজারের অন্যতম পতিতার হাট যে হাটের সামনে মানুষ হেঁটে গেলেও বিভিন্ন সময় বিব্রত কর অবস্থায় পড়তে হয়। তার পতিতালয়কে কেন্দ্র করে দিনরাত চলে নানা অপরাধ কর্মকান্ড। পতিতা খদ্দের এখানে মিলিত হয়। ২৪ ঘন্টা চলে কেনা বেচা। লালদীঘির দক্ষিনপাড়ে আহসান বোডিংয়ের ম্যানেজার নাজিম প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ও নারী নিয়ে দেহ ব্যবসা। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। সেই স্বর্গরাজ্যে পতিতা সম্রাট ম্যানেজার নাজিম, বিভিন্ন জায়গা থেকে পতিতা সংগ্রহ করে এনে কটেজ জোন ও হোটেল মোটেল জোনে সাপ্লাই করে থাকে। সাথে মাদকসেবিদের চাহিদা মেটাতে মাদকের ব্যবসাও রমরমা। বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছে এই ব্যবসা, তাকে লাগাম দেওয়ার মত কেউ নেই। তার রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট, রয়েছে ২০-২৫ জনের সন্ত্রাসী বাহিনী ও সহযোগী, তাদেরই সাহায্যে মাদক সংগ্রহ ও পাচার এবং বিভিন্ন জায়গায় নারী সাপ্লাই করে থাকে। আবার বোডিং পাহারায় রাখে, যে কোন সমস্যা মোকাবিলা করতে নাজিম তাদেরকে ব্যবহার। হোটেলের সামনে সবসময় খদ্দের বিরাতে ৬-৮ জন ও দুইপাশে থাকে ৬-৮ জন লোক দাড়িয়ে রাখে। সবাই মাদকাসক্ত ও বিভিন্ন অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত। দালাল আর রিকশা চালকদের সাথে রয়েছে যোগসাজশ রিকশা চালকেরা পর্যটন এলাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটক নিয়ে আসে। রাস্তায় চলে খদ্দরের সাথে প্রকাশ্যে দরকষাকষি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অনেকবার বারণ করলেও তা মানেনা। কোন ঝামেলা লেগে গেলে তার এসব সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মোকাবিলা করে। এমন কি জিম্মি ও অপহরণের মত ঘটনাও ঘটেছে অনেক। লোকলজ্জার ভয়ে মূখ খুলে না, অনেকে খুললেও প্রতিবাদ করতে রাজি নয় সম্মানের ভয়ে।

খবর নিয়ে জানা যায়, এসব হোটেল গুলোতে প্রশাসন অনেকবার অভিযান পরিচালনা করেছে, জেল জরিমানাসহ মামলাও হয়েছে। ১৫-২০ দিন জেল খেটে জামিনে বাইরে এসে পুনরায় চালিয়ে যায় এসব ব্যবসা। আবার এখন হোটেল রুমের ভিতরে জানালা ভেঙে তৈরি করা হয়েছে পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা, যেন কোন অভিযানে নিরাপদে পালিয়ে যেতে পারে। এই আহসান বোডিং উপভাড়া নিয়েছেন গোমাতলির ইসমাইল সে বিগত ১৫-২০ বছরের মত হবে এই ব্যবসায়। পর্যটন নগরী কটেজ জোনে আমেরডী নামে একটি হোটেল পরিচালনা করেন সেইখান থেকে সে নারী খদ্দের ও মাদকসহ একাধিকবার প্রশাসনের কাছে গ্রেফতার হয়েছে। গত লকডাউনের পরে জেলা ডিবি পুলিশের অভিযানের পর থেকে সে চট্টগ্রামে পাড়ি জমিয়েছে।

তার হোটেল আহসান বোডিং এর ম্যানেজার নাজিমের একান্ত সহযোগী রাজু প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, হোটেল টি উপভাড়া নিয়েছেন গোমাতলীর ইসমাইল। সে ১০-১২ বছর হবে এইখানে ব্যবসা করে, তবে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে পার্টনারশিপে গার্মেন্টস খুলেছে সে, তাই গত দুইমাস ধরে কক্সবাজারে নেই। হোটেল পরিচালনা করেন সাতকানিয়া লোহাগড়ার নাজিম উদ্দিন।

নারী পাচারকারীর সদস্যরা বিভিন্ন কুশল অবলম্বন করে তাদের প্রেমের ফাঁদ ফেলে অথবা জোর করে যুবতী নারীদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কক্সবাজার নিয়ে আসে। বাংলাদেশীদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নারীদেরও খুব সহজেই নিয়ে আসে এখানে। কারণ রোহিঙ্গা নারীরা বাংলাদেশীদের প্রতি বেশি আকর্ষণ করে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য। সম্প্রতি প্রেমের ফাঁদে ফেলে রোহিঙ্গা নারী পাচার অনেক বেশি বেড়ে গেছে। পাচার চক্রের ফাঁদে পড়ে অনেক নারী খুনেরও শিকার হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, এসব পতিতাদের দ্বারা নিয়মিতই ধোকাবাজির স্বীকার হচ্ছে খদ্দের ও পর্যটকরা। সেই সাথে ঘটছে ছিনতাইয়ের মত ঘটনা। ধোকাবাজির স্বীকারের ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই। লোক-লজ্জার ভয়ে কেউতো এর প্রতিবাদ করেই না।

সচেতন মহলের দাবি, লালদিঘির পাড়ের গড়ে ওঠা সবকটি হোটেলেই এইসব পতিতার দেখা মেলে। হোটেল গুলোতে শুধু পতিতার ব্যবসা নয় মরন নেশা ইয়াবা থেকে শুরু করে আরো অনেক অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত। কিন্তু প্রশাসন পতিতার বিরুদ্ধে কোন ভূমিকা নাই বলে অভিযোগ ওঠে সচেতন মহলের।

কক্সবাজার অসামাজিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর কাউন্সিলর আবু জাফর ছিদ্দিকী জানান, শহরের অনেকে আবাসিক হোটেলে প্রতিতাবৃত্তি, মাদক ও জুয়ার আসরসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। এ কারণে অপরাধ কমছেনা। যুব সমাজ ধ্বংস হচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পর্যটন নগরীর পরিবেশ।

এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুল গিয়াস বলেন, আমিতো আগে এ কথা শুনিনি, এখন জানলাম। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে। অপরাধীর শেখর কক্সবাজারে রাখবো না।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ