• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০০ পূর্বাহ্ন

প্রশ্নবিদ্ধ পুলিশের ভুমিকা, মাদক ও পতিতা নিয়ে আমোদে ম্যানেজার নাজিম

Md Nazim Uddin / ১৯ ভিউ টাইম
আপডেট : রবিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ধরাছুঁয়ার বাইরে ম্যানেজার নাজিম
বীরদর্পে চলছে আহসান বোডিংয়ে মাদক ও পতিতার ব্যবসা

আহসান বোডিং এর ম্যানেজার নাজিম ও নারী সাপ্লাই দেওয়ার ছবি

নারী সাপ্লাই, মাদক পাচার, মাদকের লেনদেন, ব্ল্যাকমেইলিং, অপহরণ, ডাকাতি ও জিম্মি করা থেকে শুরু করে সব ধরনের অপকর্মের মূল হোতা ম্যানেজার নাজিম। সেই নাজিমের বিরুদ্ধে নিউজের পর নিউজ, সে পুলিশ সাংবাদিকদের অকর্থ ভাষায় গালিগালাজ করেও বীরদর্পে চলছে শহরের লালদীঘি পাড়ের আহসান বোডিংয়ে মাদক ও পতিতার ব্যবসা, প্রশাসনের ভূমিকা আজও নির্বিকার।

রাস্তার উপর দাড়িয়ে থাকা দালাল

মাদক ও পতিতার সম্রাট ম্যানেজার নাজিম, বিভিন্ন জায়গা থেকে মাদক ও নারী সংগ্রহ করে এনে কটেজ জোন এবং হোটেল মোটেল জোনে সাপ্লাই করে থাকে। সাথে মাদকসেবিদের চাহিদা মেটাতে মাদকের ব্যবসাও রমরমা। বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছে এই ব্যবসা, তাকে লাগাম দেওয়ার মত কেউ নেই। তার রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট, রয়েছে ২০-২৫ জনের সন্ত্রাসী বাহিনী ও সহযোগী, তাদেরই সাহায্যে মাদক সংগ্রহ ও পাচার এবং বিভিন্ন জায়গায় মাদক ও নারী সাপ্লাই করে থাকে।

দালাল ও নারী সাপ্লাই দেওয়ার ছবি

তার সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে মাদক ব্যবসা ও হোটেল পাহারায় রাখে, যে কোন সমস্যা মোকাবিলা করতে ম্যানেজার নাজিম তাদেরকে ব্যবহার করে। হোটেলের সামনে সবসময় খদ্দের বিরাতে ৬-৮ জন ও দুইপাশে থাকে ৬-৮ জন করে তাদেরকে দাড়িয়ে রাখে। সবাই মাদকাসক্ত ও বিভিন্ন অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত। দালাল আর রিকশা চালকদের সাথে রয়েছে যোগসাজশ রিকশা চালকেরা পর্যটন এলাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটক নিয়ে আসে। রাস্তায় চলে খদ্দেরের সাথে প্রকাশ্যে দরকষাকষি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অনেকবার বারণ করলেও তা মানেনা। কোন ঝামেলা লেগে গেলে তার এসব সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মোকাবিলা করে। এমন কি জিম্মি ও অপহরণের মত ঘটনাও ঘটেছে অনেক। লোকলজ্জার ভয়ে মূখ খুলে না, অনেকে খুললেও প্রতিবাদ করতে রাজি নয় সম্মানের ভয়ে।

গত ২০১৮ সালের ১৫ আগষ্ট বুধবার দুপুরে কক্সবাজার সাবেক জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের নির্দেশে কক্সবাজার সদর ভুমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সাবেক মো. নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে প্রায় ২ ঘন্টা ব্যাপী অভিযানে কক্সবাজার শহরে ললনার হাট খ্যাত লালদীঘি পাড়স্থ আহসান বোর্ডিং ও নজরুল বোডিংয়ে ৭ পতিতা ও ৫ খদ্দেরসহ ১২ জনকে আটক করেছিল। আহসান বোডিং ও নজরুল বোডিংয়ে অভিযান চলাকালে উদ্ধারকৃত মালামালের মধ্যে রয়েছে, ইয়াবা ট্যাবলেট, চোলাই মদ, ধারালো কিরিচ, ১টি ল্যাপটপ, তিনটি এলইডি মনিটর, লাগেজসহ বিভিন্ন ডাকাতি মালামাল। তবে অভিযানের সময় হোটেল সংশ্লিষ্টরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করতে পারেনি। বোডিং দুটিকে সীলগালা করে দেয়া হয়েছিল। আটককৃত পতিতা ও খদ্দেরদের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১৫ ও সর্বন্মিন ৩ মাস করে বিনাশ্রমে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছিল।

তখনও হোটেল টির উপভাড়াটিয়া মালিক ছিলেন গোমাতলির ইসমাইল ও ম্যানেজার ছিলেন সাতকানিয়া লোহাগড়ার নাজিম উদ্দিন। সেই ইসমাইল ও ম্যানেজার নাজিম আজও বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছে দেহ ব্যবসার পাশাপাশি নারী সাপ্লাই, মাদক পাচার, মাদকের লেনদেন, ব্ল্যাকমেইলিং, অপহরণ, ডাকাতি ও জিম্মি করা থেকে শুরু করে সব ধরনের অপকর্ম। তারা আজ লাগামহীন, তাদের লাগাম দেওয়ার মত কেউ নেই।

আহসান বোডিং এর নাম শুনলে মানুষ মনে করে কক্সবাজারের অন্যতম মাদক ও পতিতার হাট যে হাটের সামনে মানুষ হেঁটে গেলেও বিভিন্ন সময় বিব্রত কর অবস্থায় পড়তে হয়। তার পতিতালয়কে কেন্দ্র করে দিনরাত চলে নানা অপরাধ কর্মকান্ড। পতিতা খদ্দের এখানে মিলিত হয়, ২৪ ঘন্টা চলে কেনা বেচা।

“পুলিশ সাংবাদিক…..টাইম নাই। তারা আমার পকেটে থাকে। সব নেতাদেরও মাসিক টাকা দিয়ে ব্যবসা করছি। তোর হেডাম থাকলে কিছু কর”। কক্সবাজার শহরের লালদীঘি পশ্চিম দক্ষিণ পার্শ্বে অবস্থিত আহসান বোর্ডিং এ পতিতা ব্যবসা নিয়ে সংবাদ সংগ্রহে গেলে সাংবাদিকদের দম্ভ করে এসব কথাগুলো বলেছেন হোটেলের ম্যানেজার নাজিম।

সেই হোটেল ও ম্যানেজার নাজিমের দেশের জাতীয় ও লোকাল পত্র-পত্রিকায় একাধিকবার বিভিন্ন সময় নিউজ হলেও? গত ০৬ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন অনলাইনে ও ০৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক মেহেদী পত্রিকায় লীড নিউজ প্রকাশিত হয় “কক্সবাজার শহরে পতিতার স্বর্গরাজ্য হুমকির মুখে যুব সমাজ” এবং ০৯ সেপ্টেম্বর দৈনিক মেহেদী পত্রিকায় আবার লীড নিউজ হয় “লালদীঘি পাড়ের আহসান বোডিং পতিতা-মাদকের অভয়াশ্রম” তারপরেও প্রশাসনের নাকের ডগায় মাদক ও পতিতার স্বর্গরাজ্য আহসান বোডিংয়ে বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসা প্রশ্নবিদ্ধ প্রশাসনের ভূমিকা দাবি সচেতন মহলের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রামের সহজ সরল অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক মেয়েদের দেহ ব্যবসায় বাধ্য করানোর অভিযোগও মিলছে তার বিরুদ্ধে। নারী সাপ্লাই, মাদক পাচার, মাদকের লেনদেন, ব্ল্যাকমেইলিং, অপহরণ, ডাকাতি ও জিম্মি করা থেকে শুরু করে সব ধরনের অপকর্মের মূল হোতা ম্যানেজার নাজিম। তার হাত ধরেই ইসমাইল আজ কমপক্ষে অর্ধশতাধিক কোটি টাকার মালিক। যে কোন অভিযানে আইনের চোখে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য এখন হোটেল রুমের ভিতরে জানালা ভেঙে তৈরি করা হয়েছে রাস্তা, যেন কোন অভিযানে নিরাপদে পালিয়ে যেতে পারে। ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে চাননা এসব হোটেলের কর্মকর্তারা আবার মালিক পক্ষের অনেকেই। আর পতিতারাও চলে নেকাব পরে-যেন তাদের স্বজনেরা চিনতে না পারে।

পারিবারিক কলহ বা অভাবের তাড়নায় দেহ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন বলে জানালেন এসব নারীরা, আবার মাদকের টাকার জন্যও এরা এসব কাজে সম্পৃক্ত বলে জানান। এদের অনেকেই জানায়, জানিনা কেন এসেছি এই পেশায় নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়েছি এ কাজে। এদের অনেকেই বলেন, হোটেল মালিক তাদের এমনভাবে ব্যবহার করেছেন- ইচ্ছে করলেও এই পেশা ছাড়তে পারছেন না। এর পিছনে রয়েছে মাদক, দিনে দুই-তিন বেলা মাদক সেবন না করলে থাকতে পারেন না বলে জানিয়েছেন। এসব মাদক হোটেল কতৃপক্ষই তাদেরকে সেবনে বাধ্য করেন বলে জানান।

তারা আরও জানান, শুধু খদ্দেরদের খুশি করে যা বখশিস পাওয়া যায় তাহাই তাদের প্রাপ্য। প্রতিজন খদ্দের থেকে শুধু বখশিস হিসেবে পান ৫০ ও ১’শ টাকা। আর হোটেল মালিক ও দালালরা খদ্দেরের কাছ থেকে ৫’শ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন। কিন্তু এই টাকার কোন ভাগ এসব নারীদের দেওয়া হয় না।

সেই ম্যানেজার নাজিমের একান্ত সহযোগী রাজু প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, হোটেল টি উপভাড়া নিয়েছেন গোমাতলীর ইসমাইল। সে ১০-১৫ বছর হবে এইখানে ব্যবসা করে, তবে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে পার্টনারশিপে গার্মেন্টস খুলেছে সে, তাই গত দুইমাস ধরে কক্সবাজারে নেই। হোটেল পরিচালনা করেন সাতকানিয়া লোহাগড়ার নাজিম উদ্দিন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশকে খবর দিলেও পতিতা ও আবাসিক হোটেলগুলোর বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়না। চিহ্নিত আবাসিক হোটেল থেকে প্রতিমাসে সদর মডেল থানার বেশ কিছু অসাধু প্রশাসনের কর্মকর্তা পাচ্ছে মাসোহারা। এছাড়াও স্থানীয় প্রভাবশালীরাও সাপ্তাহিক, মাসিক চাঁদা নেয়। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব চললেও প্রশাসন নির্বিকার। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো দু’একটি অভিযান চালানো হলেও তা ‘আই ওয়াশ’ ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মন্তব্য স্থানীয়দের।

স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে, শুধু পতিতা ব্যবসা নয়, রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে নারী পাচার ও ইয়াবা ব্যবসা করছেন ম্যানেজার নাজিম।

স্থানীদের মতে, এ একটি বোর্ডিং এর কারণে নষ্ট হচ্ছে কক্সবাজার শহরের পরিবেশ। অধ পতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে যুব সমাজ। বিশেষ করে স্কুল কলেজ পড়ুয়া অনেক ছাত্র সময় কাটাতে যান বলে জানান।

তারা বলেন, বোর্ডিং এর সামনে দাড়িয়ে খদ্দের সংগ্রহ করে ০৮-১২ জন যুবক। বিশেষ করে আদালতে আসা গ্রামের লোকজনকে টার্গেট করে তারা। অনেক সময় জিম্মি করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে নাজিমের বিরুদ্ধে। উক্ত স্থান দিয়ে হাঁটা চলাও সাধারণ মানুষের জন্য বিব্রতকর বলে জানান তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে লালদীঘির পাড়স্থ এক দোকানী বলেন, ব্যবসার নিরাপত্তার জন্য আবাসিক হোটেল মালিকরা মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে থাকেন। টাকা দিয়েই প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাঝে মধ্যে অভিযানে নামার আগে খবর পৌঁছিয়ে দেয়া হয় হোটেল মালিকদের।

পর্যটন শহর হওয়ার সুবাদে কক্সবাজারের অর্ধশতাধিক আবাসিক হোটেলে প্রকাশ্যে চলছে মাদক ও পতিতাবৃত্তিসহ নানা অপরাধ। রাজনৈতিক দলের নব্য নেতা থেকে শুরু করে শহরের টপ টেররদের চাঁদাবাজি ও কিছু অসাধু প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মাদক, ছিনতাই, অপহরণ, ব্ল্যাকমেইল এবং নারী ব্যবসাসহ নিয়ন্ত্রিত হয় এসব হোটেল থেকেই। এখানে বসানো হয় নারী দেহের পসরা। শুধু আবাসিক হোটেলে নয়, চালানো হয় বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ী ও আবাসিক মেসকেন্দ্রিকেও।

কক্সবাজার অসামাজিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর কাউন্সিলর আবু জাফর ছিদ্দিকী জানান, শহরের অনেকে আবাসিক হোটেলে প্রতিতাবৃত্তি, মাদক ও জুয়ার আসরসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। এ কারণে অপরাধ কমছেনা। যুব সমাজ ধ্বংস হচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পর্যটন নগরীর পরিবেশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর সার্কেল-এডিশনাল এসপি বলেন, আমরা এ বিষয়ে অবগত আছি, খুবই সতর্কতার সাথে কাজ করতেছি। অপরাধী যেই হউক কেউ রেহাই পাবে না।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ