• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৭ পূর্বাহ্ন

ছাত্রলীগ কর্মীর মৃত্যু ঘিরে রহস্য: হোটেল মালিকদের দাবি ‘মদ্যপান’

Md Nazim Uddin / ২১ ভিউ টাইম
আপডেট : শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কক্সবাজারে বেড়াতে এসে কলাতলীর একটি আবাসিক ‘হোটেলে অতিরিক্ত মদ্যপানে’ সাইমুন প্রিয়াম (২৫) ও রাফসানুল হক (২৮) নামের দুইজন ছাত্রলীগ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দিনগত রাত সোয়া দুইটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রিয়ামের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে শুক্রবার সকালে ছাত্রলীগ নেতা রাফসানুল হকের মৃত্যু হয়।

জানাগেছে, কক্সবাজার ভ্রমণে এসে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আনিস আহমেদ এর রেফারেন্সে ১৫ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে কলাতলীস্থ হোটেল বে ওয়ান্ডারস উঠেন ছাত্রলীগ কর্মী রাফসানুল হক, রায়হান ও সাইমুন প্রিয়ামসহ চার বন্ধু।

সূত্রের দাবি, সেখানে তাদেরকে ‘বিষাক্ত মদ’ সরবরাহ করে হোটেল কর্তৃপক্ষের লোকজন। সে মদ পান করার পর ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে তিন বন্ধু রাফসানুল হক, রায়হান ও সাইমুন প্রিয়াম অসুস্থ হয়ে পড়েন।

এদিকে দুই ছাত্রলীগ কর্মীর মৃত্যু ঘিরে নানা রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

হোটেল কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা সকালে অতিরিক্ত মদ পান করে। এতে তিনজন অসুস্থ হয়ে পড়লে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাফসানুল হকের মৃত্যু হয়। অপর দুই বন্ধু রায়হান ও সাইমুন প্রিয়ামের অবস্থার অবনতি হলে তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রিয়ামের মৃত্যু ঘটে।

হোটেলের রেজিস্ট্রারে দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী, ওই তিন বন্ধুর বাড়ি চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি এলাকায়। অতিরিক্ত মদ্যপানে মারা যাওয়া দুই বন্ধু চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কর্মী বলে জানা গেছে।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহিউদ্দিন আহমেদ হোটেল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জানান, কক্সবাজারে বেড়াতে এসে ১৫ সেপ্টেম্বর কলাতলীর বে ওয়ান্ডারস হোটেলে রাফসানুল হক, রায়হান ও সাইমুন প্রিয়ামসহ চার বন্ধু ওঠে। তারা সকলে অতিরিক্ত মদ পান করে। এতে তিনজন শুক্রবার সকালে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাফসানের মৃত্যু হয়। অন্য দুইজনকে চট্টগ্রামে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে প্রিয়াম নামের ছেলেটার মৃত্যু হয়েছে।

কক্সবাজার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বিপুল চন্দ্র দে বলেন, কক্সবাজারে মৃত্যুবরণ করা রাফসানুল হকের লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সুরতহাল রিপোর্ট পেতে সময় লাগবে। তবে ডাক্তাদের ধারণা মতে অতিরিক্ত মদ পানে তার মৃত্যু হয়েছে বলে আমাদেরকে জানানো হয়েছে।

সূত্রে জানাগেছে, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আনিস আহমেদ সস্তায় রুম নিয়ে দেওয়ার কথা বলে তার খালাতো ভাই জামায়াত নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সরওয়ার কামালের মালিকাধীন কক্সবাজার কলাতলী হোটেল বে ওয়ান্ডারস এ প্রায় সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও তার পরিচিত জনদের পাঠান। ধারনা করা হচ্ছে বিনিময়ে আনিস ওই হোটেল থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে থাকেন।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আনিস আহমেদ বলেন, রাফসানুল হক আমার বন্ধু আর প্রিয়াম ছোট ভাই। তাদের মৃত্যুতে আমি শোকাহত। দুইজনের লাশ জানাযার পর পর দাফন করা হয়েছে। আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম।

তিনি আরও বলেন, বে ওয়ান্ডারস হোটেলের মালিক সরওয়ার তার খালাতো ভাই হওয়ার কারনে পরিচিত অনেকেই ওই হোটেলে উঠেন। তবে মৃত্যু হওয়া দুই ছাত্রলীগকর্মী তার রেফারেন্স এ সেখানে যায়নি বলে দাবি তার।

ছাত্রলীগের দুই কর্মী মৃত্যুর বিষয়ে তাদের পরিবার আইনগত কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে আনিস আহমেদ বলেন, অতিরিক্ত মদ পানে তাদের মৃত্যু হওয়ায় হয়তো তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ করছে না। তবে মৃত ছাত্রলীগের দুই কর্মীর পরিবারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রের দাবি, বিভিন্ন সময় ওই হোটেলে বিষাক্ত মদ পান করে আরও তিনজন পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিলো।

এসব বিষয় উল্লেখ্য করে জানতে চাইলে হোটেল বে ওয়ান্ডারস মালিক সরওয়ার প্রতিবেদককে বলেন, অতিরিক্ত মদ পানের কারনে দুই ছাত্রলীগকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তারা ব্যাগে করে বিশেষ কায়দায় হোটেলের কক্ষে মদ নিয়ে আসেন। পরে তাদের সংগৃহীত মদ পান করে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

তার মালিকাধীন হোটেলে এর আগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করে সরওয়ার বলেন, আমার হোটেলে মদ বিক্রি করা হয়না। আমার হোটেলের যদি কেউ মদ সরবরাহ করে থাকে তাহলে সিসি ক্যামরায় তা ধরা পড়বে।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, অতিরিক্ত মদ খেয়ে নাকি বিষাক্ত মদ খেয়ে ওই দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে তা ময়না তদন্তের পর জানা যাবে। ওই হোটেলে আগে আর এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে কিনা তা তদন্ত করা হবে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম মহাগনর ছাত্রলীগের কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, রাফসানুল হক কোনো পদবীতে না থাকলেও ছাত্রলীগের মিছিলের অগ্রভাগে থাকতেন। নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী সাইফুল আলম লিমনের কর্মী হিসেবেই ছিলেন দীর্ঘদিন। গেল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আগে চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়ার আশ্বাসে ভিড়ে যান শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বলয়ে।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ