• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০৬ পূর্বাহ্ন

প্রশাসনের উদাসীনতায় কক্সবাজারের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত

প্রেস বিজ্ঞপ্তি / ২৫ ভিউ টাইম
আপডেট : বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০২২

কক্সবাজার জেলা পাহাড়, সমুদ্র, দ্বীপ, উপদ্বীপ, নদী, প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ, মৎস্য সম্পদ, চিংড়ী, লবণ, গাছ, উপকূল সমতল সমন্বয়ে অবস্থিত একটি বৈচিত্রময় জেলা। প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ ও সৌন্দর্য্যে ভরপুর একই সাথে জীব বৈচিত্র্যের রয়েছে নানাবিধ সমারোহ। পৃথিবীর নিরবিচ্ছিন্ন দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার কেন্দ্রিক করে উঠেছে পর্যটন শিল্পের সব থেকে বড় সম্ভাবনা। তবে অত্যন্ত দুঃখের বিষয় প্রশাসনের অবহেলার কারণে কক্সবাজারের জীববৈচিত্র্য আজ ধ্বংসের মুখে। মানব সৃষ্ট অপরিকল্পিত উন্নয়ন আর অযন্ত কক্সবাজারের জীব বৈচিত্র্য ধ্বংসের প্রধান কারণ।

আজ ৫ অক্টোবর কক্সবাজার জেলার হোটেল উপলে পরিবেশবাদের সংগঠন সবুজ আন্দোলন কক্সবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে” জেলার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। কক্সবাজার জেলার সভাপতি অধ্যাপক নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টোর সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইমরানের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সবুজ আন্দোলন পরিচালনা পরিষদের পরিচালক অধ্যক্ষ নাদিয়া নূর তনু। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ নুরুল কবির, কেন্দ্রীয় সদস্য আলহাজ্ব রেজাউল করিম নোমান, ম্যাক্সিম্যাস গ্রুপের চেয়ারম্যান রোটারিয়ান মনিরুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেলার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক যুগান্তর পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি মোঃ জসিম উদ্দিন।


প্রধান অতিথিতার বক্তব্য বলেন, আমাদের সংগঠন কক্সবাজার জেলাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। একদিকে দেশের জনগণ ও প্রশাসনের মাধ্যমে কক্সবাজার জেলার জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে অন্যদিকে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের কারণে জীববৈচিত্র্য আরো বেশি ধ্বংসের মুখে। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে এবং পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য প্রশাসনকে সব থেকে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রাকৃতিক সম্পদ ও সবুজায়ন ধ্বংস করে কোন প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না।

অনুষ্ঠানের সভাপতি বলেন, সবুজ আন্দোলন কক্সবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। আগামীতে সবুজয়ান বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। সকলের সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের প্রাণের জেলা কক্সবাজারকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, কক্সবাজারের সম্পদ নিয়ে ধ্বংসের যে তান্ডব চলছে জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে তা কালবিলম্ব না করে বন্ধ করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস ও পরিবেশ বিপর্যয়ের পরিণতিতে উপকূলে ভেসে আসছে মৃত ডলফিন, জেলিফিশ, তিমিমাছ, বৃহদাকায় কচ্ছপ, হাঙগর ও বিভিন্ন প্রকারের মাছ। চিংড়ি পোনা আহরণের কারণে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ধ্বংসের ফলে সমুদ্রে মৎস্য সম্পদ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। পাথর উত্তোলনের ফলে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ভাঙ্গনের কবলে এবং সবুজ বেষ্টনী ধ্বংস করার ফলে অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় সোনাদিয়া দ্বীপ আজ দ্বিখন্ডিত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। কক্সবাজার জেলার ২১ হাজার একর বিশিষ্ট উপমহাদেশের অন্যতম ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট কক্সবাজার জেলা হেরিটেজ “চকরিয়া সুন্দরবন “মানুষের নিষ্টুরতায় আজ নিশ্চিন্ন হতে চলেছে। তাই কক্সবাজার জেলার পাহাড় ও উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে কিছু প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হলো:
১/ উপকূল জুড়ে সংরক্ষীত বনাঞ্চল ধ্বংস না করে সকল প্রকল্প গ্রহণ এবং উঁচু পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে।

২/ সেন্টমার্টিন ও উল্লেখযোগ্য স্থানে পাথর উত্তোলন বন্ধ এবং উপকূলে নিষিদ্ধ জালে মাছ শিকার এবং অবাধে চিংড়ি পোনা আহরণ বন্ধ করতে হবে।

৩/ সৈকতে সবুজ বেষ্টনীর ঝাউবন কাঁটা বন্ধ এবং পাহাড়ে আগুন দিয়ে বনাঞ্চল ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস বন্ধ কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৪/ প্রাকৃতিক গাছ কেটে গভীর মন অঞ্চলে কারাগার নির্মাণ বন্ধ এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে জোরালো প্রচারণা করতে হবে।
৫/ দ্রুত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে মায়ানমারে পাঠাতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং টুরিস্ট পুলিশের লোকবল বৃদ্ধি করে কক্সবাজার জেলার পর্যটন শিল্পকে রক্ষা করতে হবে।
৬/ হোটেল মোটেলে পর্যটন হয়রানি বন্ধ এবং হোটেল মালিকদের বিভিন্ন হয়রানি থেকে বিরত রাখতে হবে পাশাপাশি পরিকল্পিত ভাবে সকল অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ নাজিম উদ্দিন, আমান হোসেন বাবুল, সাইফুল ইসলাম সাইফি, মোঃ মইন উদ্দিন, নয়ন সেলিনা, মনির বিন সুলতান, বেলাল উদ্দিন রাকিব, ছাবেকুন্নাহার প্রমূখ।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ